Sunday, August 30, 2009
বাচ্চা ভূতের কান্ড
(If you do not see Bangla font please click here)
মানুষের ছোট ছেলেপুলেদের আমরা বাচ্চা বলে থাকি। ভূতদের মধ্যেও বাচ্চা ভূতেরা রয়েছ,তারা সুযোগ সুবিধা পেলে নানা কান্ডকারখানা করে। আর ভূত তো-ইচ্ছা করলে কখন-সখন তুলকালাম কান্ডও করতে পারে। ঘোষবাবুর ছেলে গবু দু’বার ক্লাশ ফাইভে ফেল করল। অংকতে শূ্ন্য, ইংরেজীতে সাত, এমনি তার পরীক্ষার নম্বর- অথচ রেজাল্ট বেরুবার দিন এবার গবু দিব্যি সেজেগুজেই ইসকুলে হাজির হয়েছিল। ইসকুলে যাওয়ার পথে গম্ভীরা সাধুবাবার পায়ের কাছে টাকাও রেখেছিল। গম্ভীরাবাবা তান্ত্রিক সাধু, গবুর ভক্তি লক্ষ্য করে তিনি অত্যন্ত প্রীত হয়ে গবুর কপালে সিঁদুরের টিপ পরিয়ে আশীর্বাদও করলেন। গম্ভীরাবাবা কথা বলেন না, সর্বদা গম্ভীর হয়ে থাকেন। তাঁরচেলা ফটকরামই গম্ভীরাবাবার পায়ের কাছে টাকা পয়সা পড়লে টক করে তুলে ট্যাকে গোঁজে।ফল-ফলাদি পড়লে তুলে নিয়ে আশ্রমের ভাঁড়ার ঘরে রেখে আসে। এটাই নিয়ম এবং এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে। গবু তাই ফটকরামকে জিঞ্জাসা করল, সাধুবাবা তো আর্শীর্বাদ করলেন, এবার পাশ করবো চেলাজী?
- জরুর- বাবা যখন তোমার মাথায় টিপ টিপ পরিয়ে দিয়েছে তখন তোমায় আটকায় কে ? ফাস্ট সেকেন্ডও হয়ে যেতে পারো।
- বলেন কি চেলাজী ?
- ঠিকই বলছি, বাবার আর্শীর্বাদ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়, বাচ্চা !
অতএব গবু বেশ আন্দের সাথেই ইস্কুলে গেল। গবুর বন্ধু তোন বলল, গবু, এবার পাশ করতে পারবি তো ? গবু হেসে বলল, শুধু পাশ নয়রে, এবার সকল কে চমকে দিয়ে এক থেকে দশের মধ্যেও চলে আসতে পারি।
- বলিস কী রে ?
- ঠিকই বলছি।
তোতন বলল, আমি বোধ হয় ফেল করে যাবোরে, আর ফেল করলেই বড়দা আমায় মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে। গবু বলল, ভাগ্যিস আমি গম্ভীরাবাবার আশীর্বাদ নিয়ে এসেছি- নইলে এবারও ফেল করলে- আমায় বড়দা, মেজদা তো বেদম মারতোই, বাবা পর্যন্ত ধাক্কা দিয়ে বের করে দিত।
- তুই আগে বললি নে কেন ? আমিও গম্ভীরাবাবার আশীর্বাদ নিয়ে আসতাম।
- তোকে একথাটা বলার কথা মনে আসেনি। নইলে ঠিকই বলতাম।কিছু মনে করিসনে ভাই।
কিন্ত প্রথম লিস্ট বেরুতেই গবুর নাম খুজেঁ পাওয়াগেল না। দ্বিতীয় লিস্টেও গবুর নাম নেই, কিন্ত তোতনের নাম শেষের দিকে রয়েছে।
তোন হাসতে হাসতে বলেল, তোর নাম যে কোন লিস্টেই নেইরে গবু।
গবু গোঁ গোঁ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
তোতন আর ঘোতন জল-টল ঢেলে কোন রকমে গবুর জ্ঞানফিরিয়ে আনল।কিন্তু মূর্ছা ভঙ্গ হলেও গবু রেহাই পেলনা, পিয়ন এসে বলল,- এইযে গবুবাবা, আপনাকে আকবার এখুনি হেডস্যার দেখা করতে বলেছেন।
অতএব গবু প্রায় কাঁপতে কাঁপতে হেডস্যারের ঘরে হাজির হলো। হেডস্যার হাতে গবুর প্রোগ্রেস রিপোর্ট খানা ধরা ছিল, তিনি বলেলন, গবু, তুমি কোন্ বিষয়ে কতো পেয়েছ- তোমার জানা দরকার। আমি এক এক করে তোমার বিভিন্ন বিষয়ের প্রাপ্তনম্বর গুলো বলে যাচ্ছি।
গবু মাধা নিচুকরে রইল।
হেডস্যার বলতে লাগলেন, অংকতে শূন্য, ইংরেজীতে সাত, ভূগোলে আঠ, ইতিহাসে নয় এবং বাংলায় তেরো।--- এই প্রগ্রেস রিপোর্ট বাড়ী গিয়ে তোমার বাবাকে দেখাবে- আর বলবে আগামী বছরো ফেল করলে- তোমার মতো এমন রত্নকে আর আমাদের ইসকুলে রাখা হবে না। এই প্রোগ্রেস রিপোর্টটা সঙ্গে নাও, অবশ্য একে প্রোগ্রেস রিপোর্ট না বলে ডিগ্রেডেশান রিপোর্ট বলাই ভালো।
গবু হাত পেতে প্রোগ্রেস রিপোর্টটা সঙ্গে নিল, তারপরই কোন কথা না বলে হেডস্যারের রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এল।
ইসকুল থেকে বাইরে বেরিয়েই পাকা পীচঢালা পথ দিয়ে সে চলতে লাগল, অবশ্য বাড়ীর দিকে নয়- উল্টো দিকের পথে, অর্থ্যৎ অজানা পথে।
বাড়ী ফেরার কথা গবু ভাবতেও পারল না, কারণ বাড়ী ফিরলেই বড়দা আর মেজদা প্রোগ্রেস রিপোর্ট চাইব্, বকবে, তারপর ঝড়ের বেগে বকবে, তারপর ঝড়ের বেগে কিল চড় লাথি মারবে দমাদম। তারপর যে কি হবে, সে-কথা ভেবেই সে শিউরে উঠতে লাগল।
অতএব বাড়ী যাওয়ার কথা সে ভাবতেই পারল না, উল্টো পথ ধরল।
বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর পথে চুন্নু মিঞার সঙ্গে দেখা। চুন্নু মিঞার গবুদের বাড়ির বারই পরিচিত, কারণ মাঝে মাঝেই হাসের ডিম, মুরগীর ডিম ইত্যাদি নিয়ে গবুদের বাড়ী যায়।
গবুকে দেখতে য়ে চুন্নু মিঞা জিজ্ঞাস করল, একি গবুবাবু ইদিকে কোথায় চললেন?
গবুর মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল, চুন্নু মিঞার মতন কোনো চেনা লোকের সঙ্গে যে তার দেখ হবে, তা সে ভাবতেই পারেনি। সে বিরক্ত হয়ে বলল, জাহান্নামে যাচ্ছি।
-জাহান্নামে ? হাজান্নামে বলে কোন গাঁ তো ইদিকে নেই, আপনি ভূল পথে আসছেন, আর যিদিকেই যাননা কেন বাবু জাহানপুর বিলের কাছে কখোনও ভরদুপুরে আর সন্ধ্যেবেলায বেড়াতে যাবেন না।
- কেন ?
- জাহানপুর বিলের কাছের গাছগুলিতে বলতে গেলে ছোট-বড়ো নানান ভূতদের আড্ডাখানা। ভূতেরা একবারে গিজগিজ করে শিখানটাতে!
- সেই জাহানপুর বিলটা কোথায় ?
- সোজা এগিয়ে তারপর পাকা রাস্তা থেকে ডান দিকে মেঠো পথ ধরে ক্রোশ খানেক পথ গেলেই জাহানপুর বিল। ভুলেও ওদিকে যাবেন না গবুবাবু, জেলেরা পযর্ন্ত মাছ ধরেতে ওদিকে যায়না- যেতে ভয় পায়।
- কেন?
- যে জেলে জাহানপুর বিলেতে একরার মাছ ধরতে গেছে সে আর ফিরে আসেনি। আমরা দিনের বেলাতেও ওদিকে যাইনা।
- ঠিক আছে। আমি এদিকে সোজাসুজি একবালপুর যাব, ওখান থেকে বাসে চড়ে মামাবাড়ি ঘসেটি যাব।
- তা এই অসময়ে মামাবাড়ি যাবেন কেনে? ইবারেও বুঝি পরীক্ষাতে ফেল করেছেন ?
গবু গম্ভীর হয়ে বলল, তা নয়, একটা বিশেষ দরকারে মামার বাড়ি যাচ্ছি।
গবু কিন্ত একবালপুবে গেলনা, আর মামার বাড়িতেও যাবে না, করণ গতবার সে ফেল করার পর মামাবাড়িতে গিয়েছিল, মেজদা পরের মাসেই মামাবাড়ি গিয়ে তাকে কান ধরে টানতে টানতে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিল। চুড়ান্ত অপমানিত হয়েছিল গবু।
সেই থেকে মামা-মামীর কাছে মুখ দেখানোর কোনো উপায় গবুর নেই। বরং মামাতো ভাই গবুকে এসময়ে মামা বাড়িতে দেখলে হাসাহাসি করবে। বলবে, ওরে গবু আবার বুঝি ফেল করেছিস ?
অতএব আমার বাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা, মামাবাড়ী বড়দা বা মেজদার নাগালের বাইরে নয় মোটেই।
মনে মনে গবু ঠিক করে ফেলল, সে জাহানপুরের বিলেই যাবে, ভূতদের মুখোমুখি হবে, ভূতেরা যদি তার ঘাড় মটকে দেয় - তবে আর কোন ভাবনাই ধাকে না। বড়দা, মেজদা মারার সুযোগ পাবে না, বকতেও পারবে না, - এমনকি উগ্র মেজাজী বাবার খপ্পরেও পড়তে হবে না তাকে আর।
অতএব সে কিছুটা এগিয়ে জাহানপুরের বিলের পথই ধরল।পথে একটাও জনমণিষ্যি নেই- গাছগুলোর দিকে তাকালেই গা ছমছম করে ওঠে।
একটু এগুতেই কারা যেন খিলখিল করে হেসে উঠল।
গবু চিৎকার করে উঠল, কে হাসে ? কে হাসে ? জবাব দাও।
কিন্তু করো কাছ থেকে কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া গেল না, অর্থ্যাৎ কেউ জবাব দিলনা। আরও কিছুটা এগিয়ে যেতেই একটা পেঁচা বিশ্রীভাবে ডেকে উঠল।
গবু আর কোথায় যাবে? আ বেশি দূর এগুবার বোধহয় প্রয়োজনও ছিলনা- কারণ সামনেই জাহানপুরের বিল- বিলের জল টল্ টল্ করছে।দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে দু’একটা বড় মাছ মাথা তুলে যাই মারছে।
গবু আর একটু এগিয়ে বিলের প্রায় কাছাকাছি একটা চালতা গাছতলায় বসল। ওখানথেকে সে দেখতে পেল দু’একটা বেশ বড় মাছ মাথা তুলে তাকিয়ে, আবার ভুস করে বিলের জলে ডুব মারছে। আবার মখি তলে তাকাচ্ছে।, আবার ডুব মারছে।
গবু ভাবল মাছগুলো হয়তোবা সাধারণ মাছ নয়, ওগুলো নিশ্চই মেছো ভূত। মানুষ যেমন অপঘাতে মরে গিলে ভূত হয়, তেমনি হয়তোবা মাছেরা অপঘাতে মরে গিয়ে মেছো ভূত হয়ে থাকে। মানুষ অপঘাতে মরলে যে সচরাচর ভূত হয়, একথা গবু দিদার কাছে শুনেছে। অপঘাতে মরা মানে আত্মহত্যা করে মরা বা দুর্ঘটনায় মরা। ঐ ভাবে অপঘাতে মরার পর যদি তার বংশের কেউ গয়ায় পিন্ডি না দেয়- তবে তারা নকি ভূত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আর মাছেরা তো সবসময়ই অপঘাতে মারা যাচ্ছে।, তাদের হয়ে কেউতো আর গয়ায় পিন্ডি দিতে যায় না। তাইতো মেছো ভূতেরা এসে জাহানপুরের বিলে জমা হয়েছে।
মাছদের গোত্তরই হয় না, আর গোত্তর না জানা থাকলে গয়ায় গিয়ে পিন্ডি দিয়ে কোন লাভ হয়না। অবশ্য মাছদের গোত্তর থাকতে পারে তা মানুষের পক্ষে অজানা, মাছদের গোত্তর মাছেরাই কেবল জানে, কিন্তু মাছদের বংশের করো পক্ষেই তো আর গয়ায় যাওয়া সম্ভব নয় রেলে চেপে। তাই ওদের মেছো ভূত হয়েই জাহানপুরের বিলে চিরটা কাল থাকেত হবে।
এরপরে /Continue
মানুষের ছোট ছেলেপুলেদের আমরা বাচ্চা বলে থাকি। ভূতদের মধ্যেও বাচ্চা ভূতেরা রয়েছ,তারা সুযোগ সুবিধা পেলে নানা কান্ডকারখানা করে। আর ভূত তো-ইচ্ছা করলে কখন-সখন তুলকালাম কান্ডও করতে পারে। ঘোষবাবুর ছেলে গবু দু’বার ক্লাশ ফাইভে ফেল করল। অংকতে শূ্ন্য, ইংরেজীতে সাত, এমনি তার পরীক্ষার নম্বর- অথচ রেজাল্ট বেরুবার দিন এবার গবু দিব্যি সেজেগুজেই ইসকুলে হাজির হয়েছিল। ইসকুলে যাওয়ার পথে গম্ভীরা সাধুবাবার পায়ের কাছে টাকাও রেখেছিল। গম্ভীরাবাবা তান্ত্রিক সাধু, গবুর ভক্তি লক্ষ্য করে তিনি অত্যন্ত প্রীত হয়ে গবুর কপালে সিঁদুরের টিপ পরিয়ে আশীর্বাদও করলেন। গম্ভীরাবাবা কথা বলেন না, সর্বদা গম্ভীর হয়ে থাকেন। তাঁরচেলা ফটকরামই গম্ভীরাবাবার পায়ের কাছে টাকা পয়সা পড়লে টক করে তুলে ট্যাকে গোঁজে।ফল-ফলাদি পড়লে তুলে নিয়ে আশ্রমের ভাঁড়ার ঘরে রেখে আসে। এটাই নিয়ম এবং এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে। গবু তাই ফটকরামকে জিঞ্জাসা করল, সাধুবাবা তো আর্শীর্বাদ করলেন, এবার পাশ করবো চেলাজী?
- জরুর- বাবা যখন তোমার মাথায় টিপ টিপ পরিয়ে দিয়েছে তখন তোমায় আটকায় কে ? ফাস্ট সেকেন্ডও হয়ে যেতে পারো।
- বলেন কি চেলাজী ?
- ঠিকই বলছি, বাবার আর্শীর্বাদ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়, বাচ্চা !
অতএব গবু বেশ আন্দের সাথেই ইস্কুলে গেল। গবুর বন্ধু তোন বলল, গবু, এবার পাশ করতে পারবি তো ? গবু হেসে বলল, শুধু পাশ নয়রে, এবার সকল কে চমকে দিয়ে এক থেকে দশের মধ্যেও চলে আসতে পারি।
- বলিস কী রে ?
- ঠিকই বলছি।
তোতন বলল, আমি বোধ হয় ফেল করে যাবোরে, আর ফেল করলেই বড়দা আমায় মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে। গবু বলল, ভাগ্যিস আমি গম্ভীরাবাবার আশীর্বাদ নিয়ে এসেছি- নইলে এবারও ফেল করলে- আমায় বড়দা, মেজদা তো বেদম মারতোই, বাবা পর্যন্ত ধাক্কা দিয়ে বের করে দিত।
- তুই আগে বললি নে কেন ? আমিও গম্ভীরাবাবার আশীর্বাদ নিয়ে আসতাম।
- তোকে একথাটা বলার কথা মনে আসেনি। নইলে ঠিকই বলতাম।কিছু মনে করিসনে ভাই।
কিন্ত প্রথম লিস্ট বেরুতেই গবুর নাম খুজেঁ পাওয়াগেল না। দ্বিতীয় লিস্টেও গবুর নাম নেই, কিন্ত তোতনের নাম শেষের দিকে রয়েছে।
তোন হাসতে হাসতে বলেল, তোর নাম যে কোন লিস্টেই নেইরে গবু।
গবু গোঁ গোঁ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
তোতন আর ঘোতন জল-টল ঢেলে কোন রকমে গবুর জ্ঞানফিরিয়ে আনল।কিন্তু মূর্ছা ভঙ্গ হলেও গবু রেহাই পেলনা, পিয়ন এসে বলল,- এইযে গবুবাবা, আপনাকে আকবার এখুনি হেডস্যার দেখা করতে বলেছেন।
অতএব গবু প্রায় কাঁপতে কাঁপতে হেডস্যারের ঘরে হাজির হলো। হেডস্যার হাতে গবুর প্রোগ্রেস রিপোর্ট খানা ধরা ছিল, তিনি বলেলন, গবু, তুমি কোন্ বিষয়ে কতো পেয়েছ- তোমার জানা দরকার। আমি এক এক করে তোমার বিভিন্ন বিষয়ের প্রাপ্তনম্বর গুলো বলে যাচ্ছি।
গবু মাধা নিচুকরে রইল।
হেডস্যার বলতে লাগলেন, অংকতে শূন্য, ইংরেজীতে সাত, ভূগোলে আঠ, ইতিহাসে নয় এবং বাংলায় তেরো।--- এই প্রগ্রেস রিপোর্ট বাড়ী গিয়ে তোমার বাবাকে দেখাবে- আর বলবে আগামী বছরো ফেল করলে- তোমার মতো এমন রত্নকে আর আমাদের ইসকুলে রাখা হবে না। এই প্রোগ্রেস রিপোর্টটা সঙ্গে নাও, অবশ্য একে প্রোগ্রেস রিপোর্ট না বলে ডিগ্রেডেশান রিপোর্ট বলাই ভালো।
গবু হাত পেতে প্রোগ্রেস রিপোর্টটা সঙ্গে নিল, তারপরই কোন কথা না বলে হেডস্যারের রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এল।
ইসকুল থেকে বাইরে বেরিয়েই পাকা পীচঢালা পথ দিয়ে সে চলতে লাগল, অবশ্য বাড়ীর দিকে নয়- উল্টো দিকের পথে, অর্থ্যৎ অজানা পথে।
বাড়ী ফেরার কথা গবু ভাবতেও পারল না, কারণ বাড়ী ফিরলেই বড়দা আর মেজদা প্রোগ্রেস রিপোর্ট চাইব্, বকবে, তারপর ঝড়ের বেগে বকবে, তারপর ঝড়ের বেগে কিল চড় লাথি মারবে দমাদম। তারপর যে কি হবে, সে-কথা ভেবেই সে শিউরে উঠতে লাগল।
অতএব বাড়ী যাওয়ার কথা সে ভাবতেই পারল না, উল্টো পথ ধরল।
বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর পথে চুন্নু মিঞার সঙ্গে দেখা। চুন্নু মিঞার গবুদের বাড়ির বারই পরিচিত, কারণ মাঝে মাঝেই হাসের ডিম, মুরগীর ডিম ইত্যাদি নিয়ে গবুদের বাড়ী যায়।
গবুকে দেখতে য়ে চুন্নু মিঞা জিজ্ঞাস করল, একি গবুবাবু ইদিকে কোথায় চললেন?
গবুর মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল, চুন্নু মিঞার মতন কোনো চেনা লোকের সঙ্গে যে তার দেখ হবে, তা সে ভাবতেই পারেনি। সে বিরক্ত হয়ে বলল, জাহান্নামে যাচ্ছি।
-জাহান্নামে ? হাজান্নামে বলে কোন গাঁ তো ইদিকে নেই, আপনি ভূল পথে আসছেন, আর যিদিকেই যাননা কেন বাবু জাহানপুর বিলের কাছে কখোনও ভরদুপুরে আর সন্ধ্যেবেলায বেড়াতে যাবেন না।
- কেন ?
- জাহানপুর বিলের কাছের গাছগুলিতে বলতে গেলে ছোট-বড়ো নানান ভূতদের আড্ডাখানা। ভূতেরা একবারে গিজগিজ করে শিখানটাতে!
- সেই জাহানপুর বিলটা কোথায় ?
- সোজা এগিয়ে তারপর পাকা রাস্তা থেকে ডান দিকে মেঠো পথ ধরে ক্রোশ খানেক পথ গেলেই জাহানপুর বিল। ভুলেও ওদিকে যাবেন না গবুবাবু, জেলেরা পযর্ন্ত মাছ ধরেতে ওদিকে যায়না- যেতে ভয় পায়।
- কেন?
- যে জেলে জাহানপুর বিলেতে একরার মাছ ধরতে গেছে সে আর ফিরে আসেনি। আমরা দিনের বেলাতেও ওদিকে যাইনা।
- ঠিক আছে। আমি এদিকে সোজাসুজি একবালপুর যাব, ওখান থেকে বাসে চড়ে মামাবাড়ি ঘসেটি যাব।
- তা এই অসময়ে মামাবাড়ি যাবেন কেনে? ইবারেও বুঝি পরীক্ষাতে ফেল করেছেন ?
গবু গম্ভীর হয়ে বলল, তা নয়, একটা বিশেষ দরকারে মামার বাড়ি যাচ্ছি।
গবু কিন্ত একবালপুবে গেলনা, আর মামার বাড়িতেও যাবে না, করণ গতবার সে ফেল করার পর মামাবাড়িতে গিয়েছিল, মেজদা পরের মাসেই মামাবাড়ি গিয়ে তাকে কান ধরে টানতে টানতে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিল। চুড়ান্ত অপমানিত হয়েছিল গবু।
সেই থেকে মামা-মামীর কাছে মুখ দেখানোর কোনো উপায় গবুর নেই। বরং মামাতো ভাই গবুকে এসময়ে মামা বাড়িতে দেখলে হাসাহাসি করবে। বলবে, ওরে গবু আবার বুঝি ফেল করেছিস ?
অতএব আমার বাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা, মামাবাড়ী বড়দা বা মেজদার নাগালের বাইরে নয় মোটেই।
মনে মনে গবু ঠিক করে ফেলল, সে জাহানপুরের বিলেই যাবে, ভূতদের মুখোমুখি হবে, ভূতেরা যদি তার ঘাড় মটকে দেয় - তবে আর কোন ভাবনাই ধাকে না। বড়দা, মেজদা মারার সুযোগ পাবে না, বকতেও পারবে না, - এমনকি উগ্র মেজাজী বাবার খপ্পরেও পড়তে হবে না তাকে আর।
অতএব সে কিছুটা এগিয়ে জাহানপুরের বিলের পথই ধরল।পথে একটাও জনমণিষ্যি নেই- গাছগুলোর দিকে তাকালেই গা ছমছম করে ওঠে।
একটু এগুতেই কারা যেন খিলখিল করে হেসে উঠল।
গবু চিৎকার করে উঠল, কে হাসে ? কে হাসে ? জবাব দাও।
কিন্তু করো কাছ থেকে কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া গেল না, অর্থ্যাৎ কেউ জবাব দিলনা। আরও কিছুটা এগিয়ে যেতেই একটা পেঁচা বিশ্রীভাবে ডেকে উঠল।
গবু আর কোথায় যাবে? আ বেশি দূর এগুবার বোধহয় প্রয়োজনও ছিলনা- কারণ সামনেই জাহানপুরের বিল- বিলের জল টল্ টল্ করছে।দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে দু’একটা বড় মাছ মাথা তুলে যাই মারছে।
গবু আর একটু এগিয়ে বিলের প্রায় কাছাকাছি একটা চালতা গাছতলায় বসল। ওখানথেকে সে দেখতে পেল দু’একটা বেশ বড় মাছ মাথা তুলে তাকিয়ে, আবার ভুস করে বিলের জলে ডুব মারছে। আবার মখি তলে তাকাচ্ছে।, আবার ডুব মারছে।
গবু ভাবল মাছগুলো হয়তোবা সাধারণ মাছ নয়, ওগুলো নিশ্চই মেছো ভূত। মানুষ যেমন অপঘাতে মরে গিলে ভূত হয়, তেমনি হয়তোবা মাছেরা অপঘাতে মরে গিয়ে মেছো ভূত হয়ে থাকে। মানুষ অপঘাতে মরলে যে সচরাচর ভূত হয়, একথা গবু দিদার কাছে শুনেছে। অপঘাতে মরা মানে আত্মহত্যা করে মরা বা দুর্ঘটনায় মরা। ঐ ভাবে অপঘাতে মরার পর যদি তার বংশের কেউ গয়ায় পিন্ডি না দেয়- তবে তারা নকি ভূত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আর মাছেরা তো সবসময়ই অপঘাতে মারা যাচ্ছে।, তাদের হয়ে কেউতো আর গয়ায় পিন্ডি দিতে যায় না। তাইতো মেছো ভূতেরা এসে জাহানপুরের বিলে জমা হয়েছে।
মাছদের গোত্তরই হয় না, আর গোত্তর না জানা থাকলে গয়ায় গিয়ে পিন্ডি দিয়ে কোন লাভ হয়না। অবশ্য মাছদের গোত্তর থাকতে পারে তা মানুষের পক্ষে অজানা, মাছদের গোত্তর মাছেরাই কেবল জানে, কিন্তু মাছদের বংশের করো পক্ষেই তো আর গয়ায় যাওয়া সম্ভব নয় রেলে চেপে। তাই ওদের মেছো ভূত হয়েই জাহানপুরের বিলে চিরটা কাল থাকেত হবে।
এরপরে /Continue
এই সময়ে 10:22 AM এই পোস্টে লিঙ্ক
এতে সদস্যতা: পোস্টস (Atom)
No comments:
Post a Comment